১৫ অগাস্ট সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দেওয়া হুমকির সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি ‘বায়তুল আমান’ গুঁড়িয়ে দিয়েছে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াতকে ‘ইশারা দিলে ইট থাকবে না’ বলে হুংকার দেওয়া শামীম ওসমানের নিজের অনুপস্থিতিতেই তার বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটল।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় মাস ধরে দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। সরকারের পতনের পর থেকেই তার বিভিন্ন স্থাপনায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। এবার চাষাঢ়া মোড়ে অবস্থিত তার দাদা বাড়ি ‘বায়তুল আমান’ ভবনটি একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো।
বুধবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু-এর নেতৃত্বে মিশনপাড়া এলাকা থেকে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চাষাড়া এলাকার বায়তুল আমানের সামনে জড়ো হন বিক্ষুব্ধ জনতা।
সূত্র জানায়, আগে থেকেই সেখানে বুলডোজার প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। মিছিল শেষে বুলডোজার দিয়ে প্রথমে বায়তুল আমানের সীমানা প্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয় এবং এরপর পুরো ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের মানুষ যেমন আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ, তেমনি নারায়ণগঞ্জবাসীও শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমানের প্রতি ক্ষুব্ধ। তারা নারায়ণগঞ্জবাসীকে এতটাই ক্ষুব্ধ করেছেন, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বাইতুল আমান গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে।’
এই ঘটনা শামীম ওসমানের পুরোনো হুংকারের এক উল্টো ছবি তৈরি করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই তিনি বারবার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ‘ইট খুলে নেওয়ার’ হুমকি দিতেন এবং ইশারা দিলেই তাদের বাড়ির ইট থাকবে না বলে জানাতেন।
অথচ, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা জামতলায় শামীম ওসমানের নিজের বাড়ির ইট খুলে নেয়। এছাড়া উত্তর চাষাঢ়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি হিরা মহল ও রাইফেল ক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুরো শহর জুড়ে সে সময় ‘বোরকা শামীম ওসমান পালিয়ে’ স্লোগানে মুখরিত ছিল।
উল্লেখযোগ্য, গত ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করায় তৎকালীন নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সমালোচনার মুখে পড়েন। সেদিন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু আইভীকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি নির্দেশ দেই তাহলে আপনার বাড়ি ওই হোয়াইট হাউজের একটি ইটও থাকবে না।’ সেই হুমকির মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় টিপুর নেতৃত্বেই শামীম ওসমানের ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো।
ভবনটি শুধুমাত্র ওসমান পরিবারের বাসস্থান ছিল না, এর একটি গভীর ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়া এলাকার এই বায়তুল আমান থেকেই। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে এই ভবনটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল।