বাংলাদেশে ইসকনঃ বিতর্ক, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ

By নতুন যাত্রা • 01 Dec 2024, 00:00 • 58 views

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস বা ইসকন, বিশ্বজুড়ে তার ধর্মীয় প্রচারণা ও সামাজিক কার্যকলাপের জন্য পরিচিত একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন। বাংলাদেশেও ইসকনের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। তবে, বাংলাদেশে ইসকন নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশে ইসকনকে কেন্দ্র করে যেসব বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, তার বিশ্লেষণ করবো।

ইসকনের উত্থান বাংলাদেশে
বাংলাদেশে ইসকনের আগমন এবং প্রারম্ভিক কার্যকলাপের সঠিক ইতিহাস নির্ধারণ করা কঠিন হলেও, ধারণা করা হয় যে বাংলাদেশে ইসকনের প্রসার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মতোই হয়েছে। ভারতে ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় ইসকনের ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। সংগঠনটি ধর্মপ্রচার, মন্দির পরিচালনা এবং বার্ষিক রথযাত্রা উৎসব আয়োজন করে থাকে। ইসকন বাংলাদেশে'র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় ইসকনের মন্দির আছে প্রায় ৬৪ টি। এছাড়া অনেকগুলি ইসকন কেন্দ্র আছে বিভিন্ন জেলায়। ভক্তরা নিয়মিত কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে, বিশেষ করে হিন্দু যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসকনের ধারণা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। 

বাংলাদেশে ইসকনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক

ইসকনের ধর্মীয় অনুশীলন এবং প্রচার পদ্ধতি অনেকের কাছেই উগ্র মনে হয়। ইসকনের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণুতার অভিযোগ প্রায়ই উঠে আসে। বিশেষ করে যেসকল এলাকায় ইসকন সংখায় বেশি সেখানেই তারা সাম্প্রদায়িক ঝামেলার সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ আছে। 
 
ইসকনের ধর্মীয় অনুশীলন এবং প্রচার পদ্ধতি অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। বিগত ২০২৩ সালে এমন কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনায় ইসকন সাংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলো। সিলেট জুম্মার নামাজের সময় উচ্চ ভলিউমে কির্তন করা, ঢাকায় তারাবিহ নামাজের সময় উচ্চ ভলিউমে কির্তন করা নিয়েও ইসকন বিতর্কে জড়িয়ে পরে।  এছাড়াও ইসকনের ধর্মান্তরকরণের অভিযোগ অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

ইসকনকে রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। বিশেষ করে, ইসকনের কিছু কর্মকাণ্ডকে বিদেশি হস্তক্ষেপের সাথে যুক্ত করে দেখা হয়। সিলেটে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ইসকনের আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে। 

ইসকনের সাথে ভারতের সংযোগকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ব্যাপক বিতর্ক চলছে। অনেকেই মনে করেন যে ইসকন ভারতের একটা অংশ হিসেবে কাজ করে। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসকনের ব্যাপক ভক্ত সংখ্যা থাকায় তারা সেটাকে কাজে লাগিয়ে নানা সময়ে বাংলাদেশের নানা ইস্যুকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ভারতের হস্তক্ষেপ চেয়েছে। যা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ শান্তিপূর্ন পরিবেশ বিনষ্ট করেছে। 

ইসকন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান এবং পাঠ্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এছাড়াও, ইসকনের ধর্মীয় প্রচারণার পদ্ধতি অনেকের কাছেই জোরপূর্বক মনে হয়।

ইসকনের অর্থায়ন এবং তহবিল সংগ্রহের পদ্ধতি
ইসকন বিশ্বজুড়ে তার কার্যকলাপ চালাতে বিভিন্ন উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করে। বাংলাদেশেও ইসকন বিভিন্ন পদ্ধতিতে তহবিল সংগ্রহ করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে - 

দানঃ ইসকনের সদস্যরা এবং সমর্থকরা নিয়মিত দান করেন।
মন্দিরে অর্থ সংগ্রহঃ মন্দিরে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানঃ ইসকন পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে আয় হয়।
বিদেশ থেকে তহবিলঃ ইসকনের বিদেশী শাখা থেকে তহবিল আসে।

ইসকনের অর্থায়ন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন যে ইসকন বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চালায়।


আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসকনকে কেন্দ্র করে যেসব বিতর্ক হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধর্মান্তরকরণ, শিশু নির্যাতন, অর্থের অপব্যবহার ইত্যাদি। এই ধরনের ঘটনা ইসকনের বিরুদ্ধে জনমতকে প্রভাবিত করেছে। চীনে ইসকনসহ বিদেশি ধর্মীয় সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে কাজের অনুমতি নেই। মালয়েশিয়াতে ধর্মান্তরকরণের অভিযোগে ইসকন নিষিদ্ধ। ইরান, সৌদি আরব ও আফগানিস্তানেও ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। ইন্দোনেশিয়ায় ইসকনের কার্যক্রম কিছু শর্ত সাপেক্ষে পরিচালিত হয়। এছাড়া তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানে ইসকনের ওপর কঠোর নজরদারি রয়েছে।

ইসকনের ভবিষ্যৎ এবং এর সম্ভাব্য পরিবর্তন
বাংলাদেশে ইসকনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সরকারের নীতি, সমাজের প্রতিক্রিয়া এবং ইসকনের নিজস্ব কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে ইসকনের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।

সরকার যদি ইসকনের কার্যকলাপের উপর আরো কঠোর নজর রাখে এবং কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে ইসকনের কার্যকলাপ সীমিত হতে পারে। সমাজ যদি ইসকনের বিরুদ্ধে আরো সচেতন হয় এবং প্রতিবাদ করে, তাহলে ইসকনের জনপ্রিয়তা কমতে পারে।

তবে, অনেকের মতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোন বার্তা আসা প্রয়োজন। ইসকন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও পরিষ্কার করে বলা উচিত। ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করে ইসকন নিয়ে আরও নিরপেক্ষ খবর প্রকাশ করা উচিত। বাংলাদেশে ইসকনের কর্মকাণ্ড এখন চোখে পড়ার মত। কিন্ত, মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্তত ৯৯% ইসকন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে। যা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য কল্যাণকর নয়।


এ আর এইচ। নতুনযাত্রা 
 

Share
Facebook WhatsApp Email

More from politics