নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। একাধিক সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র অভিযোগ করেছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ 'কখনো এমন দেখেননি' এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ 'ক্র্যাশ প্রোগ্রাম' ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে বলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নাসিকের ১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, "সারা নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ কর্মসূচী নিতে হবে। সিটি করপোরেশন অথবা জেলা প্রশাসনের এই মুহূর্তে একটা ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেওয়া জরুরি। এটা না হলে সামনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। এটা করোনার মতোই ভয়াবহ হয়ে যাচ্ছে।"
সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র ও ১৬, ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আফসানা আফরোজ বিভা জানান, তার নিজের বাড়িতেও চারজন ডেঙ্গু আক্রান্ত। তিনি বলেন, "কখনো ডেঙ্গুর অবস্থা এমন দেখিনি। ঘরে ঘরে ডেঙ্গু আক্রান্ত, আমার ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও শুনেছি।"
নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর শাহেন শাহ আহম্মেদ বলেন, "আমার ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশন থেকে ঠিকমতো ওষুধ দেয়া হচ্ছেনা। তাই ডেঙ্গু খুবই খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঘরে ঘরে রোগী আবার মারাও গেছে। এমন অবস্থা আমার ওয়ার্ডে আগে কখনো দেখিনি।"
১৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মতে, "একটা ওয়ার্ডে যতটুকু ওষুধ লাগে তা সিটি করপোরেশন কিংবা সরকার দিতে পারছেনা।" একই কথা জানান ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশাও।
নাসিকের ১৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, "রোগী বাড়ছে কিন্তু হাসপাতালে সেবা নেই। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের সেবার মান খুবই খারাপ।" তিনি গবেষণার মাধ্যমে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের উপর জোর দেন।
৮, ৯, ও ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক নারী সংরক্ষিত কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা বলেন, "আমার এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। ওষুধ দেয়া হচ্ছে কিন্তু তারপরও ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। এটা কি কারণে হচ্ছে তা বুঝতে পারছিনা।"
সাবেক কাউন্সিলররা ডেঙ্গু বৃদ্ধির পেছনে স্থানীয় কিছু সমস্যার পাশাপাশি জনসচেতনতার অভাবকেও দায়ী করেছেন।
আবুল কাউসার আশা বলেন, "আগে আমার ওয়ার্ডের ড্রেনগুলোর মুখ খোলা ছিলো, তাই চাইলেই সেটা উঠিয়ে পরিষ্কার করা যেতো। এখন তা করা যায় না বলে ভেতরেই মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। তারপর আমরা নিজেরাও সচেতন না। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে হলে আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে।"
মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ এবং আফসানা আফরোজ বিভা উভয়ই মনে করেন, পরিস্থিতি সামলাতে জনগণের আরেকটু সচেতন হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। তারা সিটি কর্পোরেশনের প্রতি অবিলম্বে এই সংকট নিরসনে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।